“কেউই সত্যিই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কল্পনা করতে চায় না – এমন এক যুদ্ধ যেখানে কেউই সম্পূর্ণভাবে বাঁচবে না। এটা এখন শুধু সংবাদ শিরোনাম বা মানচিত্রের ব্যাপার নয় – এটা বাড়ি, পরিবার, ছোট শিশুদের কথা। মুহূর্তেই জীবন নিভে যেতে পারে। যদি বিশ্ব আবার সেই পথে যায়, তখন জয়ী-পরাজয়ের মধ্যে তফাৎ করা সম্ভব হবে না। শুধু বাঁচা আর ছাই হয়ে যাওয়ার পার্থক্য থাকবে।
তবুও মানুষ জিজ্ঞাসা করে – কোন দেশগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে? এটি একটি ভয়ানক প্রশ্ন, কিন্তু অযৌক্তিক নয়। ঝুঁকি বোঝা ভয় ছড়ানো নয়, বরং প্রস্তুতি নেওয়া। এটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আমরা কী হারাতে পারি।
যেখানে আগুন জ্বলতে পারে:
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি কখনো শুরু হয়, তা আগের যুদ্ধগুলোর মতো হবে না। কোনো পরিখা বা অশ্বারোহী বাহিনী থাকবে না। এবার হয়তো একটি মিসাইল দিয়ে শুরু হবে। বা একটি সাইবার আক্রমণে পুরো শহর অচল হয়ে যাবে। বা প্রশান্ত মহাসাগরের কোনো দ্বীপ নিয়ে বিবাদ থেকে।
বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছেন:
-
চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা, যেখানে আমেরিকা জড়িত হতে পারে
-
রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে পূর্ব ইউরোপে টানাপোড়েন
-
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল প্রতিদ্বন্দ্বিতা
-
উত্তর কোরিয়ার অপ্রত্যাশিত হুমকি
এগুলোর যেকোনো একটি থেকে যুদ্ধ শুরু হতে পারে।
যেসব দেশ প্রথমে ধ্বংস হতে পারে:
“ধ্বংস” শব্দটি হালকাভাবে নেবেন না। শুধু বোমাবর্ষণ নয়, সামরিক, অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া।
-
তাইওয়ান: প্রতিদিন আক্রমণের ভয়ে থাকে। চীন এটিকে নিজের অংশ মনে করে। তাইওয়ানের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ বলেছিলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রস্তুত।”
-
দক্ষিণ কোরিয়া: সিউলে ১ কোটির বেশি মানুষ বাস করে। উত্তর কোরিয়ার হাজারো কামান সেদিকেই তাক করে আছে। যুদ্ধ হলে প্রথম কয়েক ঘণ্টাতেই ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে।
-
ইউক্রেন ও পূর্ব ইউরোপ: রাশিয়া যদি ন্যাটো দেশে আক্রমণ করে, পুরো ইউরোপ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।
-
ইসরায়েল-ইরান: ইরানের নেতা একবার ইসরায়েলকে “ক্যান্সারের টিউমার” বলেছিলেন। তাদের যুদ্ধ হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য অগ্নিকাণ্ডে পরিণত হবে।
-
যুক্তরাষ্ট্র: বড় শহরগুলো লক্ষ্যবস্তু হবে। বিদ্যুৎ, পানি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস হতে পারে।
-
চীন: যুদ্ধে জিতলেও এর বিশাল ক্ষতি হবে। অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
পরমাণু যুদ্ধ হলে কী হবে?
একটি দেশ যদি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে, অন্যরাও করবে। রাশিয়া-আমেরিকা যুদ্ধ হলে প্রথম মাসেই ৩০ কোটির বেশি মানুষ মারা যেতে পারে। সূর্যের আলো ঢাকা পড়ে যাবে, খাদ্য উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।
নিরপেক্ষ দেশগুলোর কী হবে?
ইতিহাস বলে, যুদ্ধে কেউ নিরাপদ নয়। সুইজারল্যান্ডের মতো দেশও সাইবার আক্রমণ বা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শিকার হতে পারে।
কঠিন সত্য
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে কোনো দেশই সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে না। কেউ দ্রুত ধ্বংস হবে, কেউবা ধীরে ধীরে। এটা শুধু রাজনীতির কথা নয় – এটা সিউলের বৃদ্ধ যে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, কিয়েভের মা যে রাতে সাইরেন শোনে, তেল আভিভের কিশোর যে যুদ্ধের প্রস্তুতি ছাড়া কোনো বছর মনে করতে পারে না – তাদের সবাইর কথা।
এটা আপনার কথা, আমার কথা, আমাদের সবার কথা।
আইনস্টাইন বলেছিলেন,
“আমি জানি না তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কী দিয়ে লড়া হবে, কিন্তু চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ লড়া হবে লাঠি-পাথর দিয়ে।”
আশা করি আমরা কখনোই তা জানব না।”


