বিশ্লেষকদের মতে, ভারতে সোনার দামের বড় ধরনের পতন হওয়ার সম্ভাবনা কম। যদিও কিছু সামান্য মূল্য সংশোধন হতে পারে। সোনার মূল্য ভারতীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবসময়ই শক্তিশালী ছিল, যা এর সাংস্কৃতিক মূল্য এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য জনপ্রিয়। বর্তমানে ভারতে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি গ্রাম প্রায় ৭,৫৯০ টাকা এবং ২২ ক্যারেটের জন্য প্রায় ৭,২৮৭ টাকা। বৈশ্বিক চাহিদা এবং ডলারের ওঠানামা সোনার মূল্যে প্রভাব ফেলছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনা বর্তমানে প্রতি আউন্স প্রায় ২০০০ ডলারে লেনদেন হয়, যা মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রার তারতম্য এবং সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রভাবিত।
ইতিহাসগতভাবে, সোনার মূল্য বৃদ্ধির এক অসাধারণ ধারা প্রদর্শন করেছে। ১৯২৪ সালে প্রতি আউন্স সোনার মূল্য ছিল ২০ ডলারের নিচে, যা বর্তমানে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, সোনার দীর্ঘমেয়াদী মুদ্রাস্ফীতি হেজ হিসেবে ভূমিকার পরিচায়ক। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে সোনার মূল্য রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়, যা ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দা ও ভূ-রাজনৈতিক সংকটের মতো বৈশ্বিক ঘটনাগুলোর সময়ও দেখা গিয়েছিল। ফোর্বসের মতে, ২০০০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতে ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার মূল্য ৪,৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০,০০০ টাকারও বেশি হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশাল প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
বিনিয়োগের জন্য, ভারতে সোনা এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যা সোনায় বিনিয়োগের একটি কাগজবিহীন পদ্ধতি প্রদান করে। ২০২৪ সালের জুন মাসে ভারতীয় ইটিএফ-এ ৭.৩ বিলিয়ন টাকার নিট প্রবাহ দেখা যায়, যেখানে বহুগুণ পোর্টফোলিওগুলোর ১০% পণ্য হিসেবে সোনায় বরাদ্দ করা হয়। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই) তার সোনা মজুত বাড়িয়ে বর্তমানে ৮৪০ টনের বেশি করেছে, যা চলতি বছরে তুরস্কের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কেন্দ্রিয় ব্যাংক সোনা ক্রয়ের ক্ষেত্রে। এই মজুত বৃদ্ধি বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার প্রচেষ্টা নির্দেশ করে।
বৈশ্বিক বাজারে সস্তা সোনার জন্য হংকং এবং দুবাই উল্লেখযোগ্য, যেখানে নিম্ন আমদানি শুল্ক এবং অনুকূল বাণিজ্য নীতি কার্যকর থাকে। ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই এসব বাজারে সোনা কেনার কথা বিবেচনা করেন, বিশেষ করে দিওয়ালির মতো উচ্চ চাহিদার মৌসুমে। ২০২৫ সালের সোনার মূল্য সম্পর্কিত পূর্বাভাস অনুকূল, কারণ বিশ্লেষকরা আশা করছেন যে মুদ্রাস্ফীতি এবং সম্ভাব্য মুদ্রা অবমূল্যায়নের কারণে এর নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে চাহিদা অব্যাহত থাকবে।