Site icon DH News

২০২৪-এ কেন টাকার মান কমছে?

rupee value depreciating

rupee value depreciating

২০২৪ সালে ভারতীয় টাকা(INR) মার্কিন ডলারের (USD) বিরুদ্ধে ব্যাপক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে, যা গত কয়েক বছরের ধারাবাহিক প্রবণতা। বর্তমান সময়ে রুপি ₹৮৩-৮৫ প্রতি ডলারে লেনদেন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এবং বিশ্লেষকরা কিছু প্রধান কারণে রুপি অবমূল্যায়ন হওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

১. ২০২৪ সালে রুপি অবমূল্যায়নের একটি মূল কারণ হচ্ছে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের (Fed) মুদ্রানীতি। গত কয়েক বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুদের হার অত্যন্ত বাড়িয়েছে, যা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে। ফেডের সুদের হার উচ্চতর থাকার কারণে মার্কিন ডলার শক্তিশালী হয়েছে।

সুদের হারের পার্থক্য ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার ৫.২৫%-৫.৫% এর মধ্যে, যেখানে ভারতের সুদের হার (RBI-এর রেপো রেট) ৬.৫%। উচ্চ সুদের হার মার্কিন ডলারকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে, যা বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের ভারত থেকে মূলধন বের করে নিয়ে যাওয়ার দিকে পরিচালিত করে।

বিশেষজ্ঞের মতামত:
বিশ্ববিদ্যালয় অফ সাউথ এশিয়া-এর অর্থনীতিবিদ রাধিকা রাও মন্তব্য করেছেন, “বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের শক্তি রুপি দুর্বল করার প্রধান চালিকাশক্তি। মার্কিন সুদের হার দীর্ঘকাল ধরে উচ্চ থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, ফলে রুপি চাপের মধ্যে থাকবে।”

২. চলতি হিসাবের ঘাটতি (CAD)

ভারতের বর্তমান হিসাব ঘাটতি (CAD) একটি দীর্ঘস্থায়ী কাঠামোগত সমস্যা। ২০২৪ সালে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে, বিশেষত কাঁচামালের মূল্য এবং তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়। যখন তেলের দাম বাড়ে, ভারতের আমদানি বিল বেড়ে যায় এবং এর ফলে বিদেশি মুদ্রার চাহিদা বাড়ে, যা রুপি দুর্বল করে।

বিশ্বের তেলের দাম $৮০-৯০ প্রতি ব্যারেল থাকার কারণে, ভারতকে এই আমদানির জন্য আরও ডলারের প্রয়োজন হচ্ছে। এর ফলে রুপি দুর্বল হয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞের মতামত:
সৌম্য কান্তি ঘোষ, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার (SBI) প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, “ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। বর্তমান হিসাব ঘাটতি বাড়তে থাকলে রুপি অব্যাহতভাবে দুর্বল থাকবে, যদি রপ্তানির বৃদ্ধি তীব্র না হয় অথবা তেলের দাম তীব্রভাবে না কমে।”

৩. ভারতে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি

২০২৪ সালে ভারতের মুদ্রাস্ফীতি এখনও একটি গুরুতর সমস্যা। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদের হার বাড়িয়েছে, তবে ভারতের মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্য পরিসরের উপরে রয়েছে, যা ২%-৬% এর মধ্যে থাকার কথা। খাদ্যদ্রব্য, বিদ্যুতের মূল্য এবং শ্রমজীবী সংকটের কারণে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে।

ভারতে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলির তুলনায়, রুপির ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে বিনিয়োগকারীরা ডলারকে আরও নিরাপদ মুদ্রা হিসেবে নির্বাচন করেন।

বিশেষজ্ঞের মতামত:
সুবীর গোকর্ণ, RBI-এর প্রাক্তন উপ-গভর্নর মন্তব্য করেছেন, “ভারতে মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধ করা কঠিন। যখন ভারতীয় মুদ্রাস্ফীতি বাড়ে, তখন বিনিয়োগকারীরা ডলারে স্থানান্তরিত হয়, যা রুপি দুর্বল করে।”

৪. পুঁজির প্রবাহ এবং FDI হ্রাস: যদিও ভারত কিছু বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) দেখেছে, তবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (FII) দেশীয় কিছু অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ কমে গেছে।

৫. ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ফরেক্স মার্কেট মার্কিন ডলারের শক্তি দ্বারা প্রভাবিত। ফেডের সুদের হার নীতি ডলারের শক্তি বাড়িয়েছে, এবং অন্যান্য প্রধান মুদ্রাগুলির মতো ইউরো এবং ইয়েনের মান কমেছে। উন্নয়নশীল বাজারের মুদ্রাগুলি রুপি সহ, বৈশ্বিক মূলধন প্রবাহ, কাঁচামালের মূল্য এবং সংকুচিত বৈশ্বিক তরলতা দ্বারা চাপের সম্মুখীন। এইসব কারণের জন্য, বৃহস্পতিবার মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপি সর্বকালের সর্বনিম্ন 84.37-এ নেমে এসেছে।

Exit mobile version